শক্তির বিভিন্ন রূপ (পাঠ ২-৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান শক্তির ব্যবহার | - | NCTB BOOK
250
250

আমাদের কাজ করার সামর্থ্যের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা আমরা কোথা থেকে পাই? এটা আমরা সকলেই হয়তো জানি যে পৃথিবীতে সকল শক্তির উৎসই হলো সূর্য। তাছাড়া আমাদের চারপাশে রয়েছে শক্তির বিভিন্ন উৎস। যেমন তোমরা নিশ্চয় গ্যাস দিয়ে রান্না করতে দেখেছ। আবার দেখেছ কিভাবে তেলকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত উভয় ক্ষেত্রেই আমরা গ্যাস বা তেলকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে শক্তির জোগান দিয়েছি। এখন আমরা বিভিন্ন প্রকার শক্তিররূপ নিয়ে কথা বলব।

যান্ত্রিক শক্তি

মনে কর তুমি দৌড়াচ্ছ বা একটি গাড়ি চলছে। এই দুই ক্ষেত্রেই গতি আনতে কাজ করতে হচ্ছে। আবার তুমি একটি ইট নিচ থেকে উপরে উঠিয়ে ছেড়ে দিলে অথবা গুলতি দিয়ে একটি আম পাড়ার চেষ্টা করছ। এখানে তুমি ইটটিকে উপরে উঠানোর পর এতে শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। ইটটি ছেড়ে দিলে তা নিচের দিকে পড়তে থাকে এবং গতিশক্তি অর্জন করে। এই গতিশক্তি আসে সঞ্চিত শক্তি রূপান্তরের ফলে। আবার গুলতিকে প্রথমে পিছনে টানার পর যে শক্তি সঞ্চিত হয়, তা দিয়েই গুলতির পাথরটি দ্রুত গিয়ে আমটিকে আঘাত করে। এই যে দৌড়ানো, গাড়ি চলা, ইট উঠানো বা গুলতি দিয়ে আম পাড়া এর প্রত্যেকটির সাথেই এক ধরনের শক্তির সম্পর্ক রয়েছে। এই বিশেষ ধরনের শক্তিই হলো যান্ত্রিক শক্তি। যদিও এতে স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তি ব্যাপারটি আলাদাভাবে জড়িত। গতির জন্য কাজ করার সামর্থ্য হল গতিশক্তি। যেমন, দৌড়াতে থাকা মানুষ বা চলন্ত গাড়ির শক্তি। আবার কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য সঞ্চিত শক্তি হলো স্থিতি শক্তি। যেমন ইট উপরে উঠালে বা গুলতিকে টেনে ধরলে যে শক্তি সঞ্চিত হয় তা স্থিতিশক্তি।

রাসায়নিক শক্তি

খাদ্যে বা জ্বালানিতে যে শক্তি জমা থাকে তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ ও গতি শক্তি আমরা খাদ্যে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি থেকে শ্বসনের মাধ্যমে পাই। পেট্রোল, গ্যাস, কাঠ, কয়লা ইত্যাদি সব কিছুরই রয়েছে রাসায়নিক শক্তি। আমরা টর্চ বাতি বা রেডিয়োতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করি তার মধ্যেও রয়েছে রাসায়নিক শক্তি।

তাপ শক্তি

রান্না করতে, মোটর গাড়ি বা রেলগাড়ির ইঞ্জিন চালাতে যে শক্তি ব্যবহার করা হয় তাকে বলে তাপশক্তি। কয়লা, গ্যাস, কাঠ, পেট্রোল বা ডিজেল পুড়িয়ে এই শক্তি পাওয়া যায়। আবার সূর্য থেকেও সরাসরি তাপ আসে। এই তাপশক্তি পৃথিবীকে উষ্ণ রাখে। তাপ শক্তি ছাড়া কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারত না।

চুম্বক শক্তি

শক্তির আরেক রূপ হচ্ছে চুম্বক শক্তি। এই শক্তি দিয়েই কোনো চুম্বক একটি লোহার বস্তুকে আকর্ষণ করে।

আলোক শক্তি
তাপ শক্তির সাথে সূর্য থেকে সরাসরি আর যে শক্তিটি আসে তা হচ্ছে আলোকশক্তি। আলোকশক্তি ছাড়া আমরা কিছুই দেখতে পারি না। সূর্য আলোক শক্তির প্রধান উৎস। আগুন ও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালালেও আমরা আলোক শক্তি পাই।

শব্দ শক্তি
আমরা যখন কথা বলি, গান করি বা বাঁশি বাজাই, তখন এক ধরনের শক্তি উৎপন্ন করি। এর নাম শব্দ শক্তি। শব্দ শক্তির সাহায্যেই আমরা একে অপরের কথা শুনতে পাই। টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশনে শব্দ শক্তি ব্যবহার করা হয়। পদার্থের কম্পন থেকে শব্দের উৎপত্তি হয়।

বিদ্যুৎ শক্তি
শক্তির একটি অতি পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় রূপ হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তি। বিদ্যুৎশক্তি দিয়ে আমরা বাতি জ্বালাই, পাখা চালাই। কল-কারখানায় বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে রেলগাড়িও বিদ্যুৎ দিয়ে চলে। বিদ্যুৎ শক্তি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তারের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া যায়।

পারমাণবিক শক্তি
আমরা জানি যে, পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে কণিকাসমূহ অত্যন্ত শক্তিশালী বল দ্বারা একত্রে অবস্থান করে। শক্তি প্রয়োগে কণিকাসমূহকে বিচ্ছিন্ন করে পাওয়া যায় পারমাণবিক শক্তি। এরা পরমাণুর অভ্যন্তরে অত্যন্ত শক্তিশালী বল দিয়ে একত্রে বাঁধা রয়েছে। এই শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে কাজে লাগানো যায়।

Content added By
Promotion